জীবনের কঠিন পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করবেন

hard-situation
জীবনে কঠিন সময় কিংবা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ ছাড়া প্রায় সকল মানুষকে কোনো না কোনো সময় এবং কোনো না কোনো কারণে কঠিন সময়ের মোকাবেলা করতে হয়েছে।  কঠিন সময় নানান কারণে হতে পারে। যেমন: সম্পর্কে বিচ্ছেদ, টাকার অভাব, চাকরি না হওয়া বা চলে যাওয়া, অসুস্থতা ইত্যাদি।  বেশিরভাগ সমস্যা টাকার অভাবে হয়। টাকা থাকলে বাকি সব সমস্যা এমনিতে সমাধান করা যায়। বর্তমানের বিশ্ব এমনভাবে ডিজাইন করা হাতে টাকা থাকলে আপনি সুখও কিনে নিতে পারবেন।
১। আপনার সমস্যা যদি হয় প্রেম- ভালোবাসা সম্পর্কিত – তবে দু একটা দিন কাঁদতে ইচ্ছে হলে ইচ্ছেমতো কেঁদে নিন; তারপর হাত-মুখ ধুঁয়ে নিজের কাজে নেমে পড়ুন। পুরো বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি একমাস ঘরের কোণে বিরহের যন্ত্রণায় কাটিয়ে দেন, একমাস পর বাইরে এসে দেখবেন প্রেমের ধরণ এবং পেশার ধরণ সব বদলে গিয়েছে। তখন আপনি কোন দিকে দৌঁড়াবেন? নতুন প্রেমের দিকে, নাকি পেশার দিকে?
ব্রেকআপ,ডিভোর্স আমাদের জীবনেরই অংশ। একটি সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে যদি আপনি দ্রুত মুভঅন করতে পারেন নতুন সম্পর্কে জড়াবেন, অন্যথায় একা থাকবেন; তবে শুধুমাত্র সম্পর্কের দোহাই দিয়ে আপনার পুরো জীবনকে আটকে দিবেন না। ডিভোর্স – ব্রেকআপ হলেও পেটে ক্ষুধা লাগে, পরনের কাপড় লাগে, শ্বাস নিতে হয়; মানে দুনিয়ার সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলে। আপনি যেমন দুনিয়ার কিছুই বন্ধ করতে পারবেন না, তাই নিজেও কোথাও আটকে যাবেন না। গতিশীল থাকুন। নিজের লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ দিন।
লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর কী হারিয়েছেন সেই দুঃখের থেকে কী পেয়েছেন সেটার সুখ কয়েকশ গুন বেশি হবে।  দুঃখকে উপভোগ করার জন্যও টাকার প্রয়োজন হয়। কারণ দুঃখবেড়ে গেলে ট্যুর দিতে কিংবা বন্ধুদের নিয়ে পার্টি দিতেও টাকার প্রয়োজন। আগে নিজের ক্যারিয়ার, এরপর দুঃখ বিলাস।

আরো শুনুন:

ভিডিওতে বেশি ভিউ কিংবা পোস্টে বেশি লাইক মানেই কি ভালো কনটেন্ট?

অকৃতজ্ঞ মানুষ চেনার উপায়

শরীরের তুলনায় মনের যন্ত্রণা বেশি হয়ে থাকে

২। সমস্যা যদি হয় অর্থনৈতিক – তবে বলুন তো কে এই সমস্যার মোকাবেলা করেনি? হ্যাঁ! যারা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছে তাঁরা ছাড়া সকলে অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলা করেছে, করছে এবং করবে। তাঁদের বিষয়ে একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন তাঁদের বাবা, দাদা কিংবা দাদার বাবা আবার অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলা করেছেন। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দিন ফিরিয়েছেন এবং তাঁদের সন্তান এবং নাতি – নাতনিরা সেই সুফল ভোগ করছে। আজ আপনি সফল হলে যেমনটা সন্তান এবং নাতি – নাতনিরা ভোগ করবে।  অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করার সময় ধৈর্য ধরুন। তবে এই ধৈর্য ধরা মানে আপনি ঘরে চুপচাপ বসে অপেক্ষা করবেন সেটা কিন্তু নয়; ধৈর্য ধরা মানে অপেক্ষা করা নয়। ধৈর্য ধরা মানে সেই সময়ে কোনো না কোনো কাজ করে যাওয়া।  বিল গেটসের একটি উক্তি আছে- ” Patience is a key element of success.”  ধৈর্য নিয়ে ইংরেজিতে একটি উক্তি আছে- ” The secret of patience is to do something else in the meantime.”
৩। জীবনে না পাওয়া সকলের আছে। কী পাওয়া হয়নি সেদিকে ফোকাস না করে কী পেয়েছেন সে বিষয়গুলোর জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। একটু খেয়াল করে দেখুন আপনার যা আছে অনেকের সেগুলোও নেই। মনকে আপনি যত বেশি পজিটিভিটি দিতেপারবেন, ততই আপনার জন্য মঙ্গল। আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথ তত সহজ হবে।
৪। ব্যর্থতার দায় সবসময় নিজের কাঁধে রাখবেন। নিজের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনি যখন নিজের ব্যর্থতার দায় অন্যের কাঁধে চাপাবেন, তখন আপনার আর শিক্ষা নিতে ইচ্ছে করবে না। প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করবে। কোনো ভুল কিংবা ব্যর্থতা;কোনো কিছুর জন্যই নিজেকে দোষারোপ করবেন না। বরং এটিকে একটি শিক্ষার হিসেবে গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে চলুন।
৫। অতীতের কোনো ভুলের কারণে কিংবা হুট করে আমাদের জীবনে সংকট চলে আসে। প্রতিটি নতুন সংকট আমাদের জীবনে নতুন শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। মোটামুটি যাদের দূরদর্শিতা প্রখর, হুটহাট সংকটের প্রাথমিক ধাপ তাঁরা খুবস হজে পার করে ফেলে। একের পর এক সংকটের মোকাবেলা করতে করতে মানুষ দূরদর্শী হয়ে ওঠে।

আরো পড়ুন:

ক্ষমা ছাড়া মুভঅন করা সম্ভব

যেকোনো পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে শান্ত থাকার উপায়  

নিজের ব্যাপারে সতর্ক হন

৬। সমস্যার কথা শেয়ার করলে এর ভার কমে আসে। তবে নিজের সমস্যা শেয়ার করার আগে একটু ভাবনা চিন্তা করে নিবেন। যাঁর কাছে শেয়ার করছেন তিনি তাঁর যোগ্য কিনা সেটা আপনাকে ভেবে দেখতে হবে। অন্যথায় সমস্যার ভার কমবে না; বরং বাড়বে। আপনি যে সমস্যা মোকাবেলা করছেন এইরকম সমস্যা যাঁরা অতীতে মোকাবেলা করেছে তাঁদের থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
৭। আপনার জীবনের সমস্যা যতই প্রকট হোক যদি ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন – তবে নিজ ধর্ম অনুযায়ী প্রাথর্না করুন। এটি মেডিটেশনের কাজও করে। বই পড়ুন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা মোটিভেশনাল বই পড়ে তাঁদের দেহ এবং মন বেশ ভালো থাকে। আপনাকে মোটিভেশনাল বই পড়তে হবে এমন নয়; আপনার যে বই ভালো লাগে সেই বই পড়ুন। পাশাপাশি নিজের কথাগুলো লিখুন। যদি আপনি চান আপনার এই কথাগুলো কেউ না জানুন তবে প্রয়োজনে ডায়রিতে লিখে সেই পাতা ছিড়ে ফেলুন। তবুও লিখুন। মনের কষ্টের কথা লিখলে সেই কষ্টের ভারও হালকা কমে আসে।  নিজের জীবনের কঠিন সময়কে এ্যাডভেঞ্চার হিসেবে নিন। এবং একে জয় করুন।
সবার জন্য অনেক দোয়া এবংভালোবাসা।
লেখা: ফারজানা আক্তার

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *