ডিমেনশিয়া: মানুষের নাম ভুলে যাওয়া কোন ধরনের ডিজঅর্ডার?

demensia

ডিমেনশিয়া কী?

মস্তিষ্কের অনেক ধরণের অসুখ রয়েছে। ডিমেনশিয়া তারই একটি উপসর্গ। এর কমন একটি বৈশিষ্ট্য হলো স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া বা ভুলে যাওয়া। কোনো ব্যক্তি যখন ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয় তখন সে অতীতের তুলনায় সাম্প্রতিক বিষয় বেশি ভুলে যায়।

ডিমেনশিয়া মূলত বয়স্কদের রোগ। এটি একটি ভুলে যাওয়া রোগ। যেমন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কোথায় কী রেখেছে, কাকে কোন কথাটা বলেছে; নাকি বলেনি, ওষুধ খেয়েছে কিনা ইত্যাদি ভুলে যায়। এমনকি অনেক সময় তাঁরা সঠিকভাবে কথাও বলতে পারে না। কোন কথার পরে কোন কথা বলবে বুঝে উঠতে পারে না।

ডিমেনশিয়া কেন হয়?

ডিমেনশিয়া কেন হয় এর মূল কারণ এখনো জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা আলঝেইমার’স ডিজিজ বা আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনের উপস্থিতি পেয়েছেন। অতিরিক্ত প্রোটিন আমাদের মস্তিস্কের কোষগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়। এই ক্ষেত্রে কারো কারো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে।

ডিমেনশিয়া রোগের আসল কারণ বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে এটি মূলত জিনগত কারণে হয়ে থাকে। এই রোগটি বিরল প্রকারের এবং একইসাথে এটি জিনগত, জীবনশৈলী ও পরিবেশের কারণের উপর নির্ভর করে।

Brain-shrinkage-dementia-alzheimers-QBI.jpg
Brain-shrinkage-dementia-alzheimers-QBI.jpg

এই রোগটির তিনটি ধাপ রয়েছে। যেমন:

১। মৃদু:

এই ধাপে একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন তবে তাঁর কিছু কিছু স্মৃতি মুছে যায়। যেমন সে হয়তো পরিচিত কোনো জায়গা কিংবা পরিচিত কারো নাম বা শব্দ ভুলে যায়। সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা ভুলে যেতে পারে অথবা প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্র কোথায় রেখেছে বা রাখে সেগুলোও ভুলে যেতে পারে।

আরো পড়ুন:  সাইকোলজিস্ট আর সাইক্রিয়াটিস্ট-এর মধ্যে পার্থক্য কী?

২। মাঝারি :

এই ধাপে একজন ব্যক্তি তাঁর পরিচয় ভুলে যেতে পারে। সে সবসময় দ্বিধার মধ্যে থাকে এবং সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। অনেক সময় মলমূত্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

৩। তীব্র:

এই ধাপে একজন ব্যক্তি তাঁর চারপাশে কী ঘটছে, কী হচ্ছে কোনোকিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। তাঁর দৈনন্দিন জীবন যাপনের সকল প্রয়োজনের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়।

বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদদাতা জেমস গ্যালাহার বলছেন, প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসার কারণে ডিমেনশিয়ার মতো মূল্য দিতে হচ্ছে- এটিকে এভাবেও দেখা যেতে পারে। ড. সেহেলী জাহান বলেন, বংশগত কারণ ছাড়াও বার বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে, মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটলে, কিম্বা থাইরয়েডের মতো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে এবং ভিটামিনের অভাবেও ডিমেনশিয়া দেখা দিতে পারে।

উন্নত দেশগুলোতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে এখনো এই রোগ শাখা – প্রশাখা ছড়াতে পারেনি। তবে খুশি হওয়ার কারণ নেই। আমাদের এখনই এই রোগের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় বিজ্ঞানীরা এখনো আবিষ্কর করতে পারেননি। তবে স্মৃতি লোপ পাওয়া বা ডিমনেশিয়ার উপসর্গগুলো ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন দ্রুত এই রোগের নিরাময় আবিষ্কার করতে।

আরো পড়ুন: রেসিজম বলতে আসলে কী বুঝায়?

সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নিজেদের যত্ন নিন।

এই আর্টিকেলটি লিখেছেন ফারজানা আক্তার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *