বর্তমান সময়ে আমরা একটি বিষয় দেখতে পাই – সেটি হলো মানুষের সহনশীলতা কমেছে এবং রাগ বেড়েছে। অথচ হওয়ার কথা ছিলো উল্টো। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ। আপনার এই স্বাভাবিক আবেগ ঠিক কোন পর্যায়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করার কথা আসে একবার ভাবুন তো!
অনেকে রেগে গেলে প্রচুর চিৎকার চেঁচামেচি করে। অনেকে হাতের কাছে যা পায় তাই ভেঙেচুরে একাকার করে ফেলে। অনেকে সামনে থাকা মানুষটির গায়ে হাত তুলে ফেলে এবং কখনো কখনো এই রাগ ভয়ংকর রূপ ধারণ করে খুনের মতো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলে।
রাগের সময় মানুষের নমনীয়তা হারিয়ে যায়। তখন কে তাঁর কথায় কষ্ট পেলো, কাকে কী বললো এবং কী কাজ করলো সেই হিতাহিতবোধটুকুও থাকে না। তাই যথাসম্ভব রাগের সময় চুপ থাকা উত্তম যদিও সেই মুহূর্তে চুপ থাকা কঠিন। যত দ্রুত আপনি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সেটি আপনার নিজের জন্যই মঙ্গল। কারণ রাগ আপনার ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন এবং পেশাগত জীবনে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কিছু উপায় জেনে নিন:
১। যখনই রাগ হবে চেষ্টা করবেন সেই স্থান দ্রুত ত্যাগ করতে। এবং যার উপর রাগ হয়েছে তাঁর সাথে কিছুক্ষণের জন্য কথা বলা বন্ধ করে দিন। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিন।
আরো শুনুন:
কেউ যদি আপনাকে দোষারোপ করে তখন কী করবেন?
সঠিক হওয়ার থেকে কোমল হৃদয়ের মানুষ হওয়া বেশি জরুরি
প্রশংসা এবং তিরস্কারের মোকাবেলা কীভাবে করবেন?
২। চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে থাকুন। ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরে যাবে। গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়বে, মাথায় রক্ত চলাচল করবে। আপনি সতেজ অনুভব করবেন। রাগের বিষয়টি নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবার সময় পাবেন।
৩। আপনার যদি সেই মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকতে ভালো না আগে তবে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। অবশ্যই মুখ বন্ধ রেখে হাঁটাহাঁটি করবেন।
৪। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পছন্দের কোনো গান গুনগুন করতে পারেন।
৫। যদি আপনার হাতের কাছে বরফ থাকে তবে বরফের উপর হাত রাখুন। বরফ মেজাজ ঠান্ডা করতে সাহায্য করে।
৬। যদি সেই মুহূর্তে সম্ভব হয় গোসল করুন। যেই পোশাকে আছেন সেই পোশাকেই শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যান।
৭। রাগের মুহূর্তে সবথেকে কার্যকরী উপায় হলো মেডিটেশন বা ইয়োগা করা। যদিও রাগের মুহূর্তে মেডিটেশন বা ইয়োগা নিয়ে চিন্তা করা বেশ কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।
আপনি যদি একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে যতটা সম্ভব উন্নত করতে চান, নিজের মধ্যে থাকা নেগেটিভ দিকগুলোকে বিদায় জানাতে চান; তবে আপনাকে কঠিন কঠিন কাজগুলো নিজের জন্য সহজ করে নিতে হবে। রাগের সময় মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, কিন্তু একজন উন্নত মানুষ হিসেবে আপনাকে সেই হিতাহিত জ্ঞান বজায় রাখতে হবে।