বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের সফল হওয়ার গোপন টিপস যা আপনি নিজের জীবনে অনুসরণ করতে পারেন।

Benjamin Franklin

আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কে ছিলেন আপনি কী উত্তর দিবেন? বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক, আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা, লেখক, চিত্রশিল্পী, রাজনীতিবিদ, সংগীতজ্ঞ, রাষ্ট্রপ্রধান, কৌতুকবিদ, গণ-আন্দোলনকারী, কূটনীতিক?

বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছিলেন কে? এই উত্তরটাও হবে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। ধনাত্মক বা পজিটিভ চার্জযুক্ত বিদ্যুৎ এবং ঋণাত্মক বা নেগেটিভ চার্জযুক্ত বিদ্যুৎ এটাও তিনি আবিষ্কার করেছিলেন। রেশমি কাপড়ের তৈরি ঘুড়ির রেশমি সুতোয় ধাতব চাবি বেঁধে দিয়ে আকাশে চমকানো বিদ্যুৎ টেনে আনলেন। সেই বিদ্যুৎ ছাড়া আজ আমরা এক সেকেন্ডও ভাবতে পারি না। এছাড়াও তিনি বজ্রনিরোধক দণ্ড, বাইফোকাল লেন্স, অডোমিটার, বিশেষ চুলা (ফ্রাঙ্কলিনের চুলা) আর বিশেষ হারমোনিকা (ফ্রাঙ্কলিনের হারমোনিকা) আবিষ্কার করেছিলেন। মানুষ আজো এইসব কিছু ব্যবহার করছেন।

কী ছিলেন না এই ভদ্রলোক? একইসাথে এক জীবনে এতকিছু কিভাবে হলেন?

তিনি যেভাবে নিজেকে তৈরী করেছেন এবং জীবনে এগিয়ে গিয়েছেন আজ সেই বিষয়ে জানবো। তাঁকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আপনি হয়তো নিজের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: সম্পর্কে স্যরি বলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

 

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রচণ্ড মাত্রায় কমিউনিটি অরিয়েন্টেড ছিলেন। তিনি হত দরিদ্র অবস্থায় ফিলাডেলফিয়াতে আসেন এবং ধীরে ধীরে নিজের প্রভাব – প্রতিপত্তি তৈরি করেন। শুরুর দিকে তিনি ছাপাখানায় কাজ নেন এবং পরে তিনি নিজেই একটি ছাপাখানার মালিক হন। তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সে সময় আমেরিকাতে বৃটিশ শাসন চলছিল। তিনি ব্রিটিশ পোস্ট অফিসে কাজ করতেন। কাজের খাতিরে তাঁর পত্রিকা অনেক মানুষের কাছে পৌছানোর সুযোগ পান। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন লেখক হিসেবে বেশ বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর লেখা পুওর রিচার্ডস অ্যালামনাক সিরিজ আকারে প্রকাশের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন।

বেঞ্জামিন ছদ্মনামে অনেক লেখা লিখেছেন। তিনি তাঁর নিজের ভাইয়ের পত্রিকাতেও ছদ্মনামে লিখতেন। তিনি প্রচুর বই পড়তেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো তিনি মানুষকে প্রচুর চিঠি লিখতেন। লেখালেখির মাধ্যমে তিনি নিজেকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যান। ৮০ বছরের জীবনে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

জেনে নিন তাঁর সফল হওয়ার পিছিনে গোপন টিপসগুলো :

 

১। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন আলোচনা এবং পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। যে কোনো ধরণের সমস্যার ক্ষেত্রে তিনি আলোচনাকে গুরুত্ব দিতেন।

২। তিনি প্রচন্ড মাত্রায় জ্ঞানপিপাসু ছিলেন। প্রচুর বই পড়তেন। এবং গবেষণাতে মনোযোগ দিতেন। তিনি মনে করতেন জ্ঞান অর্জনের জন্য যেকোনো বিনিয়োগই লাভবান।

৩। তিনি ৪২ বছর বয়সে নিজের কাজ থেকে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন।

আরো পড়ুন: ভালোবাসার সত্যিকারের সংজ্ঞা কী?

 

৪। তিনি নিজেকে তৈরী করার জন্য প্রতি সাপ্তাহে একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেন। সেই সাপ্তাহে কী করছেন, কী করছেন না সেগুলো নোট করতেন। নিজের উন্নতি এবং অবনতি খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। সোজা কথায়, তিনি নিজেই নিজেকে তৈরী করেছেন।

৫। তিনি অনেক মানুষের উপকার করতেন। তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে ফিলাডেলফিয়ার প্রথম পাবলিক লাইব্রেরী, আমেরিকার নন-রিলেজিয়াস কলেজ ও ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট তৈরি করেন। তিনি আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন। ফিলিতে এবং প্যারিসের ক্লাবগুলোতে তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ।

৬। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি মেডিটেশন কিংবা জার্নালিং করতেন। এতে তিনি নিজের সাথে খুব সহজে কানেক্টেড হতে পারতেন।

৭। যখনই তিনি কোনো কাজ করতেন সেটা আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যেকোন কাজের ক্ষেত্রে রুটিন কিংবা
ডিসিপ্লিন গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে কাজ করাটা সহজ হয়ে যায়।

৮। নিজেকে সবসময় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। নিজের ভুলগুলো বের করে সেগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করতেন।

৯। তিনি সবসময় নিজেকে তৈরী করতে চেয়েছেন। তাই নিজের প্রতি ফোকাসড থাকতেন। প্রতিদিন নিয়ম মেনে নিজের কাজগুলো সম্পন্ন করতেন।

১০। কথা বলার সময় নিজের পরিমিতিবোধ বজায় রাখতেন। নিজের জীবনের উপর তাঁর দারুণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো।

১১। তিনি বেশ বিনয়ী ছিলেন। অহংকার তাঁকে কখনো কাবু করতে পারেনি।

১২। তিনি নিজের থেকে বেশি অন্যদের নিয়ে ভাবতেন। অন্যদের জন্য কী করা যায়, কিভাবে করা যায় এসব নিয়েই বেশি ভাবতেন। মানুষের কল্যাণের জন্য অনেক কাজ করেছেন।

১৩। সকালে ঘুম থেকে তিনি ঠিক করে নিতেন সেদিন কোন ভালো কাজটি করবেন এবং রাতে নিজে নিজেকে জিজ্ঞেস করতেন সারাদিন তিনি কয়টি ভালো কাজ করেছেন। এইভাবে নিজে নিজের কাছে নিজের কাজের জবাবদিহি করতেন।

আরো পড়ুন: ভালোলাগা এবং ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য কী?

 

১৪। প্রতিদিন সকালবেলা নিজের প্রতিষ্ঠানের সামনের অংশ পরিষ্কার করার মাধ্যমে তাঁর দিন শুরু হতো। তিনি বিশ্বাস করতেন ছোট খাটো কাজের মাধ্যমেই সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।

১৫। তিনি তাঁর নিজের কাজের জাস্টিফিকেশন বের না করে ফোকাস বাড়িয়েছেন। এই কারণে তিনি সকল ক্ষেত্রে সফল।

আশা করছি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের জীবন দর্শন আপনাদের জীবনে পজিটিভ পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আপনাদের জন্য অনেক শুভকামনা এবং দোয়া।

আর্টিকেলটি লিখেছেন ফারজানা আক্তার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *