যেকোনো পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে শান্ত থাকার উপায়  

self-development
গৌতম বুদ্ধের একটি কথা আছে,ঝড়ো বাতাসে পাহাড় কখনো নড়ে না; তেমনি প্রশংসা কিংবা তিরস্কারে জ্ঞানী ব্যক্তিরা প্রভাবিত হয় না। মানুষের জীবন অনেকটা সমুদ্রের মতো; কখনো শান্ত,স্নিগ্ধ, সুন্দর, আবার কখনো আচমকা ঝড়ে লন্ডবন্ড। জীবন কখনো একই ছন্দে এগিয়ে যায় না। নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখী হতে হয়। জীবনে ভালো -মন্দ যাই ঘটুক সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানসিকভাবে শান্ত রাখার কিছু উপায় নিয়ে আজ কথা বলবো।
১।  গৌতমবুদ্ধের ভাষ্যমতে, আটটি শব্দের মধ্যে আমাদের অনুভূতিগুলো পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন:প্রশংসা / তিরস্কার, অর্জন করা / হারানো,  সুনাম/ দুর্নাম, আনন্দ / বেদনা। যখন আমরা প্রশংসা শুনি – খুব খুশি হই,আবার যখন তিরস্কার শুনি- খুব কষ্ট পাই। ভেঙ্গে পড়ি। যখন কিছু অর্জন করি – আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ি, যখন আবার কিছু হারিয়ে ফেলি – হতাশ হয়ে যাই। এইভাবে আটটি শব্দের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অনুভূতিগুলোও পরিবর্তন হয়।
আমাদের চাওয়া হলো – শব্দ পরিবর্তন হোক,কিন্তু অনুভূতি যেন পরিবর্তন না হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা কী করবো?  ভালো-মন্দ যাই ঘটুক আমরা একসেপ্ট করে নিবো। যতদ্রুত পরিবর্তন আমরা মেনে নিতে পারবো, তত বেশি আমরা ভালো থাকতে পারবো। আপনি যদি ভাবেন মানুষ সবসময় আপনার প্রশংসা করবে, আপনি জীবনে শুধু অর্জন করে যাবেন, মানুষ শুধু আপনার সুনাম করে বেড়াবে এবংআপনি জীবনে শুধু আনন্দ উপভোগ করবেন। এমনটা কখনোই ঘটবে না। জীবনে কঠিন পরিস্থিতি আসবেই। সাহসের সাথে শান্ত থেকে সেই কঠিন পরিস্থিতি আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

আরো শুনুন:

এমপ্যাথি কী এবং কেন আমাদের জীবনে এমপ্যাথির প্রয়োজন?

পিটার প্যান সিন্ড্রোম কী?

যে তিনটি কারণে মানুষ আপনার সমালোচনা করে

২। সহনশীলতা। সহনশীল হয়ে উঠুন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে – কীভাবে সহনশীল হয়ে উঠবেন? শুরুতে একটু ভাবুন আপনি কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যেমন: কোনো মানুষ আপনার নামে খারাপ কোনো কথা বললো এবং আরো কিছু মানুষ সেটি যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করে নিলো। এখন আপনি তাদের মুখের কথা, বিশ্বাস, চিন্তা- ভাবনা; নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? পারবেন না। মানুষ কী বলবে এবং ভাববে সেটি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
আমাদের হাতে যেটি আছে সেটি হলো- আমরা তাদের প্রতি কেমন রিএকশন দেখাবো।  নেগেটিভ রিএকশন দেখাবো, নাকি টোটালি এড়িয়ে যাবো! আপনি যদি একবার বুঝে নিতে পারেন কোন বিষয়টি আপনার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, এবং কোনো বিষয়টি নেই; তবে সহনশীল হয়ে উঠা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।  আপনি যদি সমস্যা দেখেই ভয় পেয়ে যান,অল্পতে ভেঙ্গে পড়েন; তবে সেই সমস্যার সমাধান কখনোই করতেপারবেন না। ঠান্ডা মাথায় শান্ত মনে সমস্যা কোথায় থেকে শুরু হয়েছে সেটি খুঁজে বের করে সমাধান করুন। মাঝে মাঝে আমরা খুব হতাশ হয়ে পড়ি। হতাশ হয়ে বলি – আমরা নিজেরাই সমস্যা। না হলে আমাদের সাথে এমন কেন হবে? জীবনে যত বড় সমস্যাই আসুক, কোনোটিই পার্মানেন্ট নয়। সময়ের সাথে সাথে সমস্যা পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই যথাসম্ভব আমাদের উচিত সমস্যার দিকে ফোকাস না করে সমস্যা কেন হয়েছে সেটির মূল কারণ খুঁজে বের করে সমাধান করে নেওয়া। এভাবে সমস্যা সমাধানের মানসিকতার অভ্যাস তৈরী করে নিতে হবে।

আরো পড়ুন:

নিজের ব্যাপারে সতর্ক হন

যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু থামুন

৩। আত্ম – উন্নয়নের অভ্যাস তৈরী করতে হবে। নিজেকে ভালোবাসার বিকল্প কিছু নেই। আপনি যদি নিজেকে ভালোবাসেন তবে অন্যের দেওয়া নেগেটিভিটি কখনো গ্রহণ করবেন না এবং অন্যের প্রতিও কোনো ধরণের নেগেটিভিটি ছুঁড়ে দিবেন না। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে নিজে নিজেকে বলুন- আজ সারাদিন যাই হয়ে যাক না কেন আমি কোনো নেগেটিভিটি গ্রহণ করবো না। অন্যের দিকেও ছুঁড়ে দিবো না। নিজেকে ভালোবাসবো। ভালো লাগার কাজগুলো করবো।  আমরা যেমন নিজেদের বাসায় আবর্জনা ফেলে রাখি না,ফোনে বা ল্যাপটপে অপ্রয়োজনীয় সবকিছু ডিলিট করে দেই; তেমনি আমাদের মনে যেসব অপ্রয়োজনীয় এবং নেগেটিভ অনুভূতি রয়েছে সেগুলোকে ডিলিট করে দিবো।  পরিশেষে আমরা সবাই ভালো থাকতে চাই এবং আপনজনদের ভালো রাখতে চাই। অন্যকে ভালোরাখার প্রধান শর্ত হলো নিজে ভালো থাকা। আজ যে উপায়গুলো নিয়ে কথা বললাম আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নিয়মিত প্যাক্টিস করুন এবং ভালো থাকুন।
লেখা: ফারজানা আক্তার

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *