সফলতা নিয়ে একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। উক্তিটি হলো, ‘সাফল্য শুধু মানুষের অবস্থান দিয়ে পরিমাপ্য না, বরঞ্চ আদতে একজন মানুষ জীবনে কি পরিমাণ বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করেছে- সাফল্যের পরিমাপে সেটি একটি বড় বিবেচ্য বিষয়।’
সফলতা আসলে কী? কিভাবে সফলতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়?
আমরা সকলে সফলতা এবং ব্যর্থতা এই দুটি সীমারেখায় যুক্ত পথের যাত্রী। চলতে চলতে কখনো ব্যর্থতার দিকে যাই, কখনো বা সফলতার দিকে। সফল হওয়ার প্রধান শর্ত আপনাকে ব্যর্থতার স্বাদও গ্রহণ করতে হবে। কখনো শিখতে হবে নিজের ব্যর্থতা থেকে, কখনো শিখতে হবে অন্যের ব্যর্থতা থেকে।
সফল ব্যক্তিরা শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরে কিংবা জন্মসূত্র সফল নন; এর পিছনে রয়েছে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ত্যাগ এবং ঝুঁকির গল্প। আজ আমরা সফল ব্যক্তিদের কিছু গুণাবলী সম্পর্কে জানবো যা আপনার সফলতার পিছনের অনুপ্রেরণার গল্প হতে পারে।
আরো পড়ুন: সাইকোলজিস্ট আর সাইক্রিয়াটিস্ট-এর মধ্যে পার্থক্য কী?
১. ব্যর্থতা মেনে নিন:
আগেই বলা হয়েছে সফলতার প্রধান শর্ত ব্যর্থ হওয়া। সফল ব্যক্তিরা ব্যর্থতাকে সহজে গ্রহণ করেন। ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে তাঁরা সফলতার দরজা খুঁজে নেন। সাধারণ মানুষ যেখানে ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে দেন, সফল মানুষেরা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে শুরু করেন।
২. লক্ষ্য নির্ধারণ করেন:
সফল ব্যক্তিরা কখনো এক মাসে কতগুলো কাজ করবেন সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেন না। তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে অল্প অল্প করে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং সেই লক্ষ্যগুলো পূরণ করে এগিয়ে চলেন। প্রতিদিনকার লক্ষ্য পূরণ করে এগিয়ে চলতে চলতে তাঁরা সফলতার দেখা পেয়ে যান।
৩. শুধুমাত্র ভাগ্যে বিশ্বাসী নন:
সফলতা সবসময় ভাগ্য কিংবা বংশগত নয়। পরিশ্রম, শ্রম, ধৈর্য, নিষ্ঠার মূল্যেই সফলতা অর্জিত হয়। ভাগ্য সবসময় সহায়ক নাও হতে পারে; তখন একমাত্র পরিশ্রমই পারে ভাগ্যকে চক্ষু রাঙিয়ে সফলতা ছিনিয়ে নিতে।
৪. পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখেন:
সফল ব্যক্তিরা সব ধরণের পরিস্থিতিতে সচেতন পর্যবেক্ষণ রাখেন। কোথায় ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতি পূরণে কখন এবং কী ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে; তাঁরা সবসময় এই ব্যাপারগুলোতে সচেতন থাকেন এবং সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন: কোমা ও প্যারালাইসিসের মধ্যে পার্থক্য কী?
৫. যখন যা প্রয়োজন তাই শিখে নেন:
সফল ব্যক্তিরা সকল বিষয়ে দক্ষ নন। তবে যখন তাঁদের যে ধরণের জ্ঞানের এবং দক্ষতার প্রয়োজন হয় সেটা শিখে নিতে একদমই দেরি করেন না। কাল শিখবো এমন আশায় বসে থাকেন না। আজ এই মুহূর্তে তাঁরা কাজ শুরু করে দেন।
৬. সামগ্রিক ফলাফলে নজর দেন:
অতীতে কী হয়েছিলো, বর্তমানে কী আছে এবং ভবিষৎতে কী হবে এভাবে আলাদা আলাদা না ভেবে; তাঁরা তিনকালকে একসাথে করে ভাবেন। তিনকালের সামগ্রিক ফলাফল একত্রিত করে উন্নতি এবং অবনতি পর্যবেক্ষণ করেন। এইভাবেই তাঁরা সফলতার দিকে এগিয়ে যান।
৭। যোগযোগের দক্ষতা:
সফল ব্যক্তিরা যোগাযোগের ব্যাপারে বেশ দক্ষ হন। যখন তাঁর যে ধরণের সাপোর্টের প্রয়োজন সেই কাজের সাথে যারা যারা যুক্ত থাকেন তাঁদের সাথে যোগাযোগ করেন। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজগুলো আদায় করে নেন। কাজ শুরুর আগে নিজের মতো করে যাচাই – বাছাইও করে নেন।
৮। আত্মবিশ্বাস:
সফল ব্যক্তিরা নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কেউ কখনো তাঁর স্বপ্ন ছুঁয়ে দিতে পারবে না। স্বপ্ন সফল করতে পারবে না।
৯। বিনয়ী :
কথায় বলে ফলবতী গাছ সবসময় মাথা নিঁচু করে থাকে। সফল ব্যক্তিরা হলেন সেই ফলবতী গাছ। যে যত বেশি সফল সে ততবেশি বিনয়ী। পরিশ্রম করে যারা সফল হয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই যথেষ্ট পরিমাণে বিনয়ী মানুষ। এক্সেপশনাল বিষয় সবক্ষেত্রে ছিলো, এই ক্ষেত্রেও আছে।
আরো পড়ুন: রেসিজম বলতে আসলে কী বুঝায়?
১০। হাল ছেড়ে না দেওয়া :
সফল ব্যক্তিরা কখনো হাল ছেড়ে দেয় না। একইকাজে তাঁরা বারবার ব্যর্থ হলেও সেই কাজে লেগে থাকেন। সফল না পাওয়া পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেন না। তাই কোনো কাজে সফল হতে চাইলে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। হাল ছেড়ে দেওয়া মানে আর কখনো সফলতার মুখে দেখা যাবে না।