হতাশা একটি মানসিক ব্যাধি। মনের অসুখ। আমাদের শরীরে যেমন ঠান্ডা, কাশি, জ্বর এবং জন্ডিসের মতো রোগ হয়; তেমনি মনেরও নানানরকম অসুখ হয়ে থাকে। হতাশা মনের তেমনি একটি অসুখ। কোনো ইচ্ছেপূরণ না হলে কিংবা পছন্দের কিছু না পেলে আমাদের মন খারাপ হয়। আশাভঙ্গ হয় এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর ইচ্ছে চলে গিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগে। মনের এই পরিবর্তনকে হতাশা বলা হয়। হতাশা একটি মানবিক অনুভূতি এবং এই অনুভূতি যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন মারাত্মকভাবে মানসিক বিপর্যয় তৈরী হতে পারে।
ঠিক কী কী কারণে হতাশার সৃষ্টি হয়?
– একাকিত্বের কারণে।
– কোনো কিছু চাওয়ার পর সেটি না পেলে।
– পছন্দের কোনো কাজে ব্যর্থ হলে।
– তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে দেখলে।
– নেতিবাচক চিন্তা – ভাবনার কারণে।
– যে কোনো সমস্যার মোকাবেলা করার মতো সাহস না পেলে।
– অনুভূতি শূন্য হয়ে গেলে এবং আরো নানাবিধ কারণে।
আরো পড়ুন : পিচ এবং স্পিচ এর মধ্যে পার্থ্যক কী?
কিভাবে বুঝবেন একজন মানুষ হতাশায় ভুগছে?
– কেউ যদি ভালো মন্দ সকল কথায় রিএক্ট করে।
– যে কোনো কাজে বা কথায় মনোযোগ কম থাকে। সবসময় অন্যমনষ্ক থাকে।
– হতাশায় আক্রান্ত ব্যক্তির কোনোকিছুই ভালো লাগে না। কোনো কাজে আগ্রহ খুঁজে পায় না।
– কারো সাথে ঠিকভাবে মিশে না। কথা বলে না।
– সবসময় বিষণ্ণ মন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
– তাঁর কাছে সবকিছু এলোমেলো লাগে। কোনো কিছু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে না।
– নিজের শরীর, মন কিংবা কাজ কোথাও মনোযোগ দিতে পারে না। বেখেয়ালী হয়ে পড়ে।
– ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় এবং অকারণে ভয় পায়।
– ঠিকভাবে ঘুমায় না এবং সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করে।
– কোনো কথা গুছিয়ে বলতে পারে না। সব কথাতে তালগোল পাকিয়ে ফেলে।
কিভাবে হতাশা কাটিয়ে একজন মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে?
১। কারণ খুঁজে বের করা:
আপনি ঠিক কী কারণে হতাশায় আছেন সেটি আগে খুঁজে বের করতে হবে। কারণই যদি জানা না থাকে তবে কিভাবে সমাধান বের করবেন? ধৈর্য ধরে ঠান্ডা মাথায় হতাশার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তারপর ঠিক কোন কোন পদক্ষেপ নিলে এই কারণ থেকে দূরে থাকা যাবে এবং হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটি ভাবতে হবে। হতাশা থেকে বের হতে চাইলে সবার আগে হতাশার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
আরো পড়ুন : সফল ব্যক্তিদের যে গুণাবলীগুলো আপনাকে সফল হতে সাহায্য করতে পারে!
২। মন খুলে কথা বলুন:
যারা হতাশায় থাকে তাঁদের বিশাল একটি সমস্যা হলো তাঁরা মন খুলে কথা বলতে চায় না। আপনি যদি আপনার সমস্যার কথা কাউকে না বলেন তবে সে জানবে কিভাবে? সবার ক্ষেত্রে তো টেলিপ্যাথি কাজ করে না। টেলিপ্যাথি কাজ করলেও কার মনে ঠিক কী আছে সেটা বুঝে উঠা অসম্ভব। নিজের সমস্যার কথা বিশ্বস্ত কাউকে বলুন। কোনোকিছু গোপন না রেখেই বলুন। মন খুলে কথা বললে অনেক সময় হতাশা কেটে যায় বা কমে আসে। একবার চেষ্টা করে দেখুন।
৩। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন :
হতাশা কাটিয়ে উঠার অন্যতম উপায় হলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা। মানুষ যখন অবসর সময় কাটায় তখন তাঁর মনে নানান রকম এলোমেলো চিন্তা এসে ভর করে। এলোমেলো চিন্তা – ভাবনার কারণে সে হতাশায় ডুবে যায়। নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। যে কাজ করতে আপনার ভালো লাগে সেইরকম কাজে নিজেকে ব্যস্থ রাখুন। প্রয়োজনে নতুন নতুন স্কিল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করুন। নিজের দক্ষতা বাড়ান।
৪। বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটান :
আপনার বিশ্বস্ত বন্ধু এবং পরিবারের আপনজনদের সাথে সময় কাটান। আনন্দের গল্প করুন। মজার কোনো সিনেমা সকলে মিলে একসাথে দেখুন। কাছে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। ডিনারে যেতে পারেন অথবা সকলে মিলে বাসায় মজার মজার আইটেম বানিয়ে পিকনিক করে নিতে পারেন।
৫। পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান :
চেষ্টা করুন রাতে তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে যেতে। হাতের মোবাইলটাকে দূরে রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় দিতে দিতে আমরা ঘুমের সঠিক সময় পার করে ফেলি। তারপর আর পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। অনেক সময় ঘুমের অভাবে মানুষ হতাশায় ভুগে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন : ইন্টারভিউতে সফল হওয়ার কার্যকরী টিপস।
৬। মন খুলে হাসুন :
মন খুলে কথা বলার পাশাপাশি মন খুলে হাসুন। হাসি মানুষের মধ্যে জমতে থাকা রাগ এবং দুশ্চিন্তাকে কমিয়ে দেয়। হাসি খুব শক্তিশালী ব্যায়ামও। যত বেশি হাসবেন আপনি ততবেশি সুস্থ থাকতে পারবেন।
৭। বাস্তবধর্মী ভাবনা – চিন্তা করুন :
যে কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী ভাবনা – চিন্তা করুন। বাস্তবধর্মী ভাবনা – চিন্তা আপনাকে হতাশা থেকে দূরে রাখবে। কে কী ভাবলো কিংবা বললো সেটাতে কান না দিয়ে বাস্তবতা মাথায় রেখে আপনি এগিয়ে চলুন।
৮। বই পড়ুন :
বই আপনার চিন্তা – ভাবনা এবং রুচিবোধকে উন্নত করবে। বন্ধুর মতো আপনার সাথে কথা বলবে। আপনাকে নানান কিছু শেখাবে কিন্তু কখনো ছেড়ে যাবে না। বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব করুন। বই পড়ুন এবং হতাশাকে বিদায় জানান।
৯। মেডিটেশন করুন :
মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। আপনি যদি নিয়মিত মেডিটেশন করতে পারেন তবে হতাশা আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। ইয়োগা এবং মেডিটেশনকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ বানিয়ে নিন। হতাশাকে বিদায় জানিয়ে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন।