পিরিয়ডের সময় বেশিরভাগ মেয়েদের মুড সুইং হয়ে থাকে। এই সময় মেয়েদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন শুরু হয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়।
পিরিয়ড মেয়েদের জীবনের স্বাভাবিক একটি রূপ। তবে, একে কেন্দ্র করে যত ধরণের সমস্যা হয় সেগুলো মোটেই স্বাভাবিক নয়। পিরিয়ডের সময় মেয়েরা কত ধরণের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার মোকাবেলা করে সেগুলো শুধুমাত্র মেয়েরাই জানে। এই সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের বিশেষ করে পুরুষ সদস্যদের অনেক বেশি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।
পিরিয়ডের সময় মেয়েরা দুটি কারণে অনেক বেশি মানসিক চাপে পড়ে যান। প্রথম কারণ হলো পিরিয়ড এবং একে কেন্দ্র করে ব্যথাযুক্ত এবং অস্বস্তিকর যা যা ঘটবে সেগুলো নিয়ে, অন্যটি হলো PMS অর্থাৎ প্রিম্যানস্ট্রুয়াল সিনড্রোম।
প্রিম্যানস্ট্রুয়াল সিনড্রোমকে PMT-ও বলা হয়। এর লক্ষণগুলো বেশিরভাগ সময় পিরিয়ডের সময় দেখা দেয়। এই সময় মেয়েদের
– স্তন ফুলে যাওয়া
– মাথাব্যথা
– কোমরে ব্যথা
– পেট ফাঁপা এবং ক্ষুধামন্দা ছাড়াও আরো নানান রকম শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়।
আরো পড়ুন: মনোবিজ্ঞান বিষয়ক কিছু অজ্ঞাত আশ্চর্যজনক তথ্য জেনে নিন।
এছাড়া ত্বকে ব্রণ, অল্পতে উত্তেজনা, ক্লান্তি, অনিদ্রা, দুর্বল লাগা, বিষণ্নতা এবং মুড সুইং- এর মত লক্ষণও দেখা দিতে পারে। পিরিয়ডের সময় ব্যথার যন্ত্রণায় অনেক মেয়েরা চিৎকার করেও কান্নাকাটি করেন।
কেন এমন হয়?
পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপের পিটুইটারি এবং ডিম্বাশয়ের মধ্যে সংযোগ বিঘ্নিত হয়। এই সময়ে স্ট্রেসের কারণে শরীরে অনেক ধরনের নিউরোকেমিক্যালের পরিবর্তন হয়। এই সময়গুলোতে বিরক্তকর কোনো কাজ করা উচিত না এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নারীকে বিরক্ত করা উচিত নয়। ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসে কিংবা বিকেলে ফ্রেশ বাতাসে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন অথবা বন্ধুদের সাথে পছন্দের কোনো জায়গায় আড্ডা দিতে পারেন। যেহেতু এই সময় মন মেজাজ কখনো ভালো থাকে এবং কখনো বিগড়ে যায় তাই পছন্দের কাজগুলোতে বেশি ফোকাস থাকা উচিত।

পিরিয়ডের সময় শরীরে কী ঘটে?
সেরোটোনিন নামক এক ধরণের হরমোন আছে যা আমাদের মেজাজ মর্জি নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই হরমোনের মাত্রা আপনার শরীরে বেড়ে যায় তখন মন মেজাজ আপনার নিয়ন্ত্রণে আর থাকবে না। পিরিয়ডের সময় এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই ছোটোখাটো সকল বিষয়ে নারীরা সংবেদনশীল হয়ে পড়েন।
পিরিয়ড এমনিতেই খুব অস্বস্তিকর, সাথে যুক্ত হয় হরমোনের উঠানামা। এই সময় আবেগ নারীদের নিয়ন্ত্রণ করে, নারীরা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অনেকে নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কারণে অকারণে ব্যাপক কান্নাকাটি করেন। অনেক রাগারাগি করেন। ঘরের পুরুষ সদস্যদের এই সময় ধৈর্যশীল এবং যত্নশীল হতে হবে।
এর সমাধান কী?
সাধারণত শরীরে এন্ডোরফিনের মাত্রা কমে গেলে এবং সেরোটোনিনের মাত্রা বেড়ে গেলে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই সময় আপনি শরীরের অবস্থা বুঝে হালকা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। ইয়োগা, মেডিটেশন, এবং হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এতে পিরিয়ডের ব্যথা কিছুটা কমবে এবং আপনি মানসিক শান্তি পাবেন।
আরো পড়ুন: ডিমেনশিয়া: মানুষের নাম ভুলে যাওয়া কোন ধরনের ডিজঅর্ডার?
যতটা সম্ভব পিরিয়ডে সময় বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রামের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, প্রচুর রাগ হয় এবং মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন নারীরা। বেশি বেশি পানি পান করতে হবে, শাক – সবজি, এবং ফলমূল খেতে হবে। লবণ, রিচ ফুড এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার এই সময় কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিবে।
আর্টিকেলটি লিখেছেন ফারজানা আক্তার।